বাজরিগার পাখি (Budgerigar) হল ছোট এবং সুন্দর এক প্রজাতির পাখি, যা তাদের মিষ্টি স্বভাব এবং বুদ্ধিমত্তার জন্য পোষা প্রাণী হিসেবে জনপ্রিয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে বাজরিগার পাখি পালন করা খুবই সাধারণ। বাজরিগার পাখির প্রজনন প্রক্রিয়া এবং ডিম পাড়ার সময়কাল সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যারা এই পাখিগুলোকে সফলভাবে প্রজনন করাতে চান। বাজরিগার পাখি কত দিন পর পর ডিম দেয়—এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে, তাদের প্রজনন চক্র, স্বাস্থ্য, এবং উপযুক্ত যত্নের বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে।
বাজরিগার পাখির প্রজনন সময়কাল
বাজরিগার পাখির প্রজনন শুরু হয় সাধারণত এক বছর বয়সে। তবে কিছু ক্ষেত্রে, ছয় থেকে আট মাস বয়সেও তারা প্রজনন করতে পারে। তাদের প্রজনন সক্ষমতা মূলত তাদের স্বাস্থ্য, পরিবেশ, এবং খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে। প্রজননের জন্য সঠিক সময়ে এবং উপযুক্ত পরিবেশে তাদের রাখতে হবে, কারণ বাজরিগার পাখি স্বাভাবিকভাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উষ্ণ আবহাওয়া পছন্দ করে।
একটি সুস্থ বাজরিগার পাখি সাধারণত বছরের যেকোনো সময় প্রজনন করতে পারে, তবে বসন্ত এবং গ্রীষ্মকাল তাদের প্রজননের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময় তাদের খাবার ও পানীয়ের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
বাজরিগার পাখি কত দিন পর পর ডিম দেয়?
বাজরিগার পাখি ডিম পাড়ার চক্রটি খুবই নির্দিষ্ট এবং সহজভাবে বোঝা যায়। সাধারণত, বাজরিগার পাখিরা প্রজনন শুরুর পর প্রায় ১০ দিন পর প্রথম ডিম পাড়ে। এরপর তারা প্রতিদিন বা একদিন পরপর ডিম পাড়ে। একেকটি পাখি সাধারণত ৪ থেকে ৬টি ডিম পাড়ে। তবে কিছু ক্ষেত্রে তারা ৮টি ডিমও পাড়তে পারে। অর্থাৎ, পাখির স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ওপর নির্ভর করে বাজরিগার পাখি প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন বা একদিন বিরতি দিয়ে ডিম পাড়ে।
ডিম পাড়ার পর বাজরিগার পাখি সাধারণত ডিমে তা দেয় প্রায় ১৮ থেকে ২১ দিন। এই সময়টায় পুরুষ পাখি মা পাখিকে খাবার সরবরাহ করে এবং নীড়ে শান্ত পরিবেশ বজায় রাখে। সঠিক তাপমাত্রা এবং যত্নের মাধ্যমে ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে আসে।
বাজরিগার পাখি কত দিন পর পর ডিম দেয় এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে প্রথম ডিম পাড়ার পর প্রতিদিন বা একদিন পরপর তারা ডিম পাড়ে, এবং পুরো প্রজনন চক্রটি সাধারণত ৪ থেকে ৬টি ডিম পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
বাজরিগার পাখির প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ
সফল প্রজননের জন্য বাজরিগার পাখিকে উপযুক্ত পরিবেশে রাখতে হবে। নীড় (নেস্ট) বাছাই করা এবং সেটি সঠিকভাবে প্রস্তুত করা তাদের প্রজননের জন্য অত্যন্ত জরুরি। নীড়টি এমন হতে হবে, যা পাখিরা আরামদায়কভাবে থাকতে পারে এবং ডিমগুলি সুরক্ষিত থাকবে।
- নীড়ের আকার ও গঠন: বাজরিগার পাখির নীড় হওয়া উচিত ছোট, আরামদায়ক এবং নিরিবিলি। প্রায় ২০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ২০ সেন্টিমিটার গভীর একটি নীড়ই যথেষ্ট। এর মধ্যে কাঠের গুঁড়ো বা শুকনো ঘাস রাখা যেতে পারে, যাতে ডিমগুলি সুরক্ষিত থাকে।
- তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা: বাজরিগার পাখির প্রজননের জন্য প্রায় ১৮-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। এছাড়াও, সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম পরিবেশে তারা ঠিকমতো প্রজনন করতে পারে না।
- খাবার ও পানীয়ের যত্ন: বাজরিগার পাখির প্রজননকালে সঠিক খাবার এবং পর্যাপ্ত পানীয় সরবরাহ করা উচিত। তাদের খাবারে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিনের পরিমাণ বাড়ানো উচিত, যা তাদের শক্তি জোগাবে এবং ডিমের মান উন্নত করবে। প্রজনন চলাকালীন সময়ে বাজরিগার পাখিদের তাজা ফল, সবজি, ডিমের খোসা এবং ক্যালসিয়াম সম্পন্ন খাবার দেওয়া উচিত।
বাজরিগার পাখির ডিম সংক্রান্ত যত্ন
বাজরিগার পাখির ডিম যত্ন নেওয়ার জন্য বিশেষ কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সময় পাখিরা অত্যন্ত সংবেদনশীল থাকে, তাই তাদের শান্ত এবং নিরিবিলি পরিবেশে রাখা জরুরি। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো:
- নীড় পরিষ্কার রাখা: নীড়ের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীড়ে জমে থাকা ময়লা বা নোংরা ডিমগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নিয়মিত নীড় পরিষ্কার করতে হবে।
- ডিমের অবস্থান পরীক্ষা: ডিমগুলো সঠিকভাবে নীড়ে রাখা হয়েছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। ডিমগুলোর ওপর যদি কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
- অতিরিক্ত নড়াচড়া এড়ানো: বাজরিগার পাখির ডিম নীড়ে স্থির রাখতে হবে। অতিরিক্ত নড়াচড়া বা কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি হলে ডিমগুলোর ক্ষতি হতে পারে।
উপসংহার
বাজরিগার পাখির প্রজনন এবং ডিম পাড়ার চক্রটি একটি সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। বাজরিগার পাখি কত দিন পর পর ডিম দেয় এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে তারা সাধারণত প্রথম ডিম পাড়ার পর প্রতিদিন বা একদিন বিরতি দিয়ে ডিম পাড়ে। পুরো প্রজনন প্রক্রিয়াটি সফল করতে তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, সঠিক যত্ন এবং পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক দিকনির্দেশনা মেনে চললে বাজরিগার পাখির প্রজনন একটি সফল এবং আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হতে পারে।